ডায়াবেটিস কি?
ডায়াবেটিস একটি বিপাক জনিত রোগ। আমাদের শরীরে ইনসুলিন নামের হরমোনের সম্পূর্ণ বা আপেক্ষিক ঘাটতির কারণে বিপাকজনিত গোলযোগ সৃষ্টি হয়ে রক্তে গ্লুকজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং এক সময় তা প্রসাবের সংগে বেরিয়ে আসে। এই সামগ্রিক অবস্থাকে ডায়াবেটিস বলে। ডায়াবেটিস ছোঁয়াচে বা সংক্রামক কোন রোগ নয়।
ডায়াবেটিস হয়েছে কিনা কিভাবে বুঝবেন ?
ডায়াবেটিস হলে সাধারণত যেসব লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয়।
- ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া।
- খুব বেশী পিপাসা লাগা।
- বেশী ক্ষুধা পাওয়া।
- যথেষ্ট খাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমে যাওয়া।
- ক্লান্তি ও দুর্বলতা বোধ করা।
- ক্ষত শুঁকাতে দেরী হওয়া।
- খোশ-পাঁচরা, ফোঁড়া প্রভৃতি চর্মরোগ দেখা দেওয়া।
- চোখে কম দেখা।
কি কি পরীক্ষা প্রয়োজন ?
- খালি পেটে রক্ত পরীক্ষা (FBS)
- ভরা পেটে রক্ত পরীক্ষা (ABF)
- প্রসাব পরীক্ষা
- কোলেস্টেরল, থাইরয়েডের কার্যাবলী, যকৃত এবং কিডনি পরীক্ষা
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে করনীয়
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চারটি নিয়ম মানতে হয়। ক) নিয়ন্ত্রিত খাদ্য গ্রহণ। খ) সাধ্যমত কায়িক পরিশ্রম ও ব্যায়াম। গ) ঔষধ এবং ঘ) শিক্ষা।
ক) নিয়ন্ত্রিত খাদ্য গ্রহণঃ ডায়াবেটিস হলে খাদ্যের একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয়। খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা ডায়াবেটিস হওয়ার আগে যে রকম থাকে পরেও একই থাকে। পুষ্টির চাহিদার কোন তারতম্য হয় না। খাদ্যের নিয়ম মেনে চলার প্রধান উদ্দেশ্য হলো, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, স্বাস্থ্য ভালো রাখা।
খ) ব্যায়ামঃ রোগ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ব্যায়াম বা শরীর চর্চার ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ব্যায়াম করলে শরীর সুস্থ থাকে, ইনসুলিনের কার্যকারিতা ও নিঃসরণের পরিমাণ বেড়ে যায়। প্রতিদিন অন্তত ৪৫ মিনিট হাঁটলে শরীর যথেষ্ট সুস্থ থাকবে। শারীরিক অসুবিধা থাকলে সাধ্যমত কায়িক পরিশ্রম করতে হবে।
গ) ঔষধঃ সকল ডায়াবেটিক রোগীকেই খাদ্য, ব্যায়াম ও শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে, এই দুইটি যথাযথভাবে পালন করতে পারলে রোগ নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ইনসুলিন ইনজেকশন দরকার হয়। টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে চিকিৎসা শর্করা কমাবার জন্য খাবার বড়ি দিতে পারেন।
ঘ) শিক্ষাঃ ডায়াবেটিস আজীবনের রোগ। সঠিক ব্যবস্থা নিলে এই রোগকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ব্যবস্থাগুলি রোগীকেই নিজ দায়িত্বে মেনে চলতে হবে এবং রোগীর পরিবারের নিকট সদস্যদের সহযোগিতায় এ ব্যাপারে অনেক সাহায্য করতে পারে। তাই এ রোগের সুচিকিৎসার জন্য ডায়াবেটিস সম্পর্কে রোগীর যেমন শিক্ষা প্রয়োজন, তেমনি রোগীর নিকট আত্মীয়দেরও এই রোগ সম্পর্কে কিছু জ্ঞান থাকা দরকার।
ডায়াবেটিস রোগীর জরুরি অবস্থাঃ
ক) রক্তে শর্করার সল্পতা:
রক্তে শর্করার পরিমাণ কমানোর জন্য ট্যাবলেট বা ইনসুলিন দেওয়া হয়। ট্যাবলেট খাওয়ার বা ইনসুলিন নেওয়ার ফলে যদি শর্করার পরিমাণ খুব কমে তাহলে শরীরে প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
প্রতিক্রিয়ার লক্ষণগুলি নিম্নরূপঃ
● অসুস্থ বোধ করা।
● খুব বেশী খিদে পাওয়া।
● বুক ধরফড় করা।
● বেশী ঘাম হওয়া।
● শরীর কাঁপতে থাকা।
● শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা।
● অস্বাভাবিক আচারন করা।
● অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
কেন এবং কখন এই সব লক্ষণ দেখা দেয়ঃ
● ঔষধের (ট্যাবলেট বা ইনসুলিন) পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় বেশী হলে।
● ইনসুলিন ও সিরিঞ্জ একই মাপের না হলে।
● বরাদ্দের চেয়ে খাবার খুব কম খেলে বা খেতে ভুলে গেলে।
● ইনসুলিন নেওয়ার পর খুব দেরী করে খাবার খেলে।
● হঠাৎ বেশী ব্যায়াম বা দৈহিক পরিশ্রম করলে।
● বমি বা পাতলা পায়খানার জন্য শর্করা অন্ত্রনালীর হতে শোষণ না হলে।
রক্তে শর্করার অভাব হলে কি করা উচিতঃ
প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়া মাত্র রোগীকে চা-চামচের ৪ থেকে ৮ চামচ গ্লুকোজ বা চিনি এক গ্লাস পানিতে গুলে খাইয়ে দিতে হবে বা রোগী অজ্ঞান হয়ে গেলে মুখে কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা না করে গ্লুকোজ ইনজেকশন দিতে হবে বা তাকে তাড়াতাড়ি সম্ভব হলে হাঁসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
খ) ডায়াবেটিক কোমা:
ইনসুলিন নির্ভর রোগীদের সাধারণত ডায়াবেটিক কোমা হয়ে থাকে। অপর্যাপ্ত ইনসুলিন নিলে বা ইনসুলিন নির্ভরশীল রোগী ইনসুলিন একেবারে না নিলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে গিয়ে বিপর্যয় দেখা দেয়। ইনসুলিনের অভাবে রক্তের শর্করা শরীরের কাজে লাগতে পারে না, তখন তাপ ও শক্তির জন্য দেহের সঞ্চিত চর্বি ব্যবহার হতে থাকে। কিন্তু পর্যাপ্ত ইনসুলিনের অভাবে এই চর্বি অতিরিক্ত ভাঙ্গার ফলে কিছু ক্ষতিকর পদার্থ ও অম্ল রক্তে বেড়ে যায়, ফলে এসিটোন নামক একটি কিটোন বডির পরিমাণ বেশী মাত্রায় বেড়ে গিয়ে অম্লতার জন্য রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়। এই অবস্থাকে ডায়াবেটিক কোমা বলে।
ডায়াবেটিক কোমার লক্ষণঃ
● প্রসাবে শর্করার পরিমাণ খুব বেশী বেড়ে যাওয়া।
● খুব বেশী পিপাসা লাগা।
● ঘন ঘন প্রসাব হওয়া।
● অত্যন্ত বেশী ক্ষুধা লাগা।
● খুব অসুস্থবোধ হওয়া।
● বমির ভাব হওয়া।
● দুর্বলতাবোধ হওয়া। ঝিমানো।
● শ্বাসকষ্ট হওয়া।
● দ্রুত শ্বাস নেওয়া।
● মাথা ধরা। চোখে ঝাপসা দেখা।
● নিস্তেজবোধ হওয়া।
● শাঁসে এসিটোনের গন্ধ বের হওয়া।
এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে করনীয়ঃ
● শরীরে পানি স্বল্পতা কমানোর জন্য অতিরিক্ত লবণ মিশ্রিত পানি খেতে হবে।
● ইনসুলিনের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
● প্রস্রাবে কিটোন বডি আছে কিনা তা পরাক্ষা করতে হবে।
● অবিলম্বে ডাক্তারের সহায়তা নিতে হবে।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য:
● পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান।
● খাদ্য তালিকায় অন্ততঃ তিন ধরনের তাজা সবজি থাকতে হবে।
● প্রতিদিন একই সময়ে খাবার খান।
● কম ফ্যাটযুক্ত দুধ পান করুন।
● প্রতিদিন কম করে ২০-২৫ গ্রাম কাঁচা পেয়াজ খান।
● খানিকটা দারুচিনি খেতে পারেন।
● নিয়মিত পরিমাণমতো তাজা ফল খেতে হবে।
● মনে রাখতে হবে যতটা সম্ভব হারবাল চা পান করতে হবে, ক্যাফেইন চায়ের পরিবর্তে।
ডায়াবেটিস রোগীর খাওয়া উচিত নয়:
● কখনও বেশী পরিমাণে খাওয়া চলবে না।
● যেসব খাদ্য বা পানীয়তে চিনির পরিমাণ বেশী থাকে সেসব বর্জন করতে হবে।
● কাঁচা লবণ নয়।
● বেশি ভাঁজা ও তৈলাক্ত খাবার খাওয়া যাবে না।
● প্রতিদিন দুই কাপের বেশি চা বা কফি খাওয়া নিষেধ।
● দুধ খেতে হলে ফ্যাট কমিয়ে খেতে হবে।
● পনির খেতে হবে ফ্যাট ছাড়া।
● ভাত, আলু, কলা এবং গাজর রক্তের চিনির পরিমাণ বাড়ায়। সুতরাং যত কম খাবেন, তত ভালো।
মনে হয় এগুলো মানা খুব কঠিন কিছু না। আপনি যদি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন তাহলে এগুলো অবশই পালনীয়। আর যারা ভালো আছেন তারা যদি এভাবে নিয়ম মেনে চলেন, তাহলে নিরাপদ থাকতে পারবেন।
ডায়াবেটিস নিয়ে সচরাচর প্রশ্ন:
কাদের ডায়াবেটিস হতে পারে?
যে কেউ যেকোনো বয়সে যেকোনো সময় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে তিন শ্রেণীর লোকের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে।
● যাদের বংশে, যেমন বাবা-মা বা রক্ত সম্পর্কিত নিকট আত্মীয়ের ডায়াবেটিস আছে।
● যাদের ওজন অনেক বেশী।
● যারা ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের কোন কান কাজ করেন না।
● বহুদিন ধরে করটিসোল জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করলে।
কি কি অবস্থায় ডায়াবেটিস প্রকাশ পাওয়া সম্ভাবনা থাকে?
● শরীরের স্থুলতা।
● গর্ভাবস্থা।
● ক্ষত।
● আঘাত।
● অস্ত্রপচার।
● রক্তনালীর অসুস্থতার কারণে হঠাৎ করে মস্তিষ্কের রোগ।
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থেকে কি ধরনের বিপদ হতে পারে?
● পক্ষাঘাত/স্ট্রোক
● স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতা
● হৃদরোগ
● চক্ষুরোগ
● মূত্রাশয়ের রোগ, প্রস্রাবে আমিষ বের হওয়া, পরবর্তীতে কিডনির কার্যক্ষমতা লোপ পাওয়া।
● পাতলা পায়খানা
● যক্ষ্মা
● মাড়ির প্রদাহ
● চুলকানি
● ফোঁড়া
● পাঁচড়া
● রোগের কারণে যৌন ক্ষমতা কমে যাওয়া
● মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশী ওজনের শিশু, মৃত শিশুর জন্ম, অকালে সন্তান প্রসাব, জন্মের পরই শিশুর মৃত্যু এবং নানা ধরনের জন্ম ত্রুটি দেখা দিতে পারে
কিভাবে বুঝবেন আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে?
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা বোঝার উপায় হচ্ছে রক্তের শর্করার (গ্লুকোজ) মাত্রা পরীক্ষা করে দেখা। যদি খালি পেটে রক্তের শর্করার (গ্লুকোজ) মাত্রা ৬.১ মিলি মোল/লিটার থাকে এবং খাবার পর ৮.০ মোল/লিটার পর্যন্ত হয়, তবে ডায়াবেটিস খুব ভালো নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মনে করতে হবে। খাবারের পর রক্তে শর্করার (গ্লুকোজ) মাত্রা ১০ মিলি মোল/লিটার পর্যন্ত হলে ডায়াবেটিস মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মনে করতে হবে। রক্তের শর্করার (গ্লুকোজ) মাত্রা এর চেয়ে বেশী হওয়ার অর্থ হলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নাই।
পরীক্ষা | টার্গেট |
---|---|
রক্তে শর্করা | |
অভুক্ত অবস্থায় | ৪.৪-৬.১ মিলিমোল/লিটার |
খাবারের ২ ঘন্টা পর | ৪.৪-৮ মিলিমোল/লিটার |
HbAJC (হিমোগ্লোবিন এ১সি) | < ৭.০% |
ওজন | |
বি এম আই (BMI) | < ২৫ কেজি/মিটার২ |
রক্তচাপ | < ১৩০/৮০ মিমি মারকারি |
রক্তের চর্বি | |
কোলেস্টেরল(Cholesterol) | < ২০০ মিগ্রা/ডেসি লিটার |
এল ডি এল(LDL) | < ১০০ মিগ্রা/ডেসি লিটার |
এইচ ডি এল(HDL) | > ৪০ মিগ্রা/ডেসি লিটার |
ট্রাইগ্লিসারাইড(TG) | < ১৫০ মিগ্রা/ডেসি লিটার |
ডায়াবেটিস কি সরানো যায়?
ডায়াবেটিস রোগ সরে না। এ রোগ সারাজীবনের রোগ। তবে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এ রোগকে খুব ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলে প্রায় স্বাভাবিক কর্মঠ জীবনযাপন করা যায়।
হাইপোথাইরয়েডিজম মানুষের একটি রোগ যা থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে উৎপাদিত থাইরয়েড হরমোনের উৎপাদনের স্বল্পতার কারণে হয়ে থাকে। শিশুদের মধ্যে থাইরয়েড হরমোন
জন্মগত অভাবজনিত বামনত্ব, পেশীকাঠিন্য ও মানসিক জড়তা হলে তাকে ক্রেটিনিজম বলে।
রোগের লক্ষণ
উচ্চ রক্তচাপ (হাই প্রেসারের) কি?
সাধারনভাবে, যদি হৃদ-সংকোচন বা সিস্টোলিক রক্ত চাপ উভয় বাহুতে ১৪০ মি.মি পারদ অথবা উপরে থাকে (চাপের একটি একক) কিংবা হৃদ-প্রসারণ বা ডায়াস্টলিক চাপ ৯০ মি.মি পারদ অথবা উপরে থাকে,তাহলে তার উচ্চ রক্ত চাপ বলা যেতে পারে
উচ্চ রক্তচাপ (হাই প্রেসারের) এর উপসর্গ
যদি আপনার অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ থাকে, তাহলে আপনি নীচের উপসর্গগুলি লক্ষ্য করে থাকতে পারেনঃ
• প্রচণ্ড মাথাধরা:
• অবসাদ অথবা বিভ্রান্তি:
• দৃষ্টির সমস্যা:
• বুকে ব্যথা:
• শ্বাসপ্রশ্বাসে অসুবিধা:
• দ্রুত বক্ষস্পন্দন (বুক ধড়ফড়ানি):
• প্রস্রাবে রক্ত:
হাই প্রেসারের (উচ্চ রক্তচাপ) এর চিকিৎসা
উচ্চ রক্তচাপ সম্পূর্ণভাবে চিকিৎসা করা যায়না কিন্তু অধিকতর জটিলতা এড়ানোর জন্য সঠিক পরিচর্যা এবং উচ্চ রক্তচাপ-প্রতিরোধী ওষুধগুলির দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
• যদি পারদের মাত্রার হিসাবে 120/80 mm-এর স্বাভাবিক বা তার নীচে আপনার রক্তচাপ থাকে, বর্ধিত রক্তচাপের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া এড়াতে আপনার ডাক্তার আপনাকে স্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং ব্যায়ামের মত একটা স্বাস্থ্যকর জীবনধারা মেনে চলার পরামর্শ দেবেন।
• সিস্টোলিক বিপি পারদের মাত্রার হিসাবে 120-129 mm হয় কিন্তু ডায়াস্টোলিক বিপি পারদের মাত্রার হিসাবে 80 mm-এর চেয়ে কম হয়, যা প্রিহাইপারটেনশন-এর শ্রেণীতে পড়ে। এই পর্যায়ে, আপনার ওষুধের দরকার নাও হতে পারে, কিন্তু, আপনার রোজকার রুটিনে পরিমিত খাবার এবং ব্যায়ামের অন্তর্ভুক্তির দরকার হতে পারে।
• যদি আপনার সিস্টোলিক বিপি পারদের মাত্রার হিসাবে 130-139 mm এবং ডায়াস্টোলিক বিপি পারদের মাত্রার হিসাবে 80-89 mm-এর চেয়ে কম হয়, এর মানে হল আপনার স্টেজ (পর্যায়) 1 হাইপারটেনশন আছে। এই ক্ষেত্রে, আপনার ডাক্তার আপনাকে হয়তো এক বা একাধিক উচ্চ রক্তচাপ-প্রতিরোধী ওষুধ, তার সাথে, খাদ্যতালিকায় কিছু বদল, ব্যায়াম, এবং যথাযথ বিপি পর্যবেক্ষণের পরামর্শ দিতে পারেন।
• সিস্টোলিক বিপি পারদের মাত্রার হিসাবে 140 mm অথবা তার বেশি এবং ডায়াস্টোলিক বিপি পারদের মাত্রার হিসাবে 90 mm বা তার বেশি হয়, এর মানে হল আপনার স্টেজ (পর্যায়) 2 হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। এই ক্ষেত্রে, আপনার ডাক্তার একের বেশি উচ্চ রক্তচাপ-প্রতিরোধী ওষুধ এবং খাদ্যতালিকায় কঠোর কিছু রদবদল এবং ব্যায়ামের রুটিন, তার সাথে, যথাযথ বিপি পর্যবেক্ষণের পরামর্শ দেবেন।
• ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার্স, এসিই ইনহিবিটর্স, বিটা-ব্লকার্স, এবং ডায়ুরেটিকস-এর মত ওষুধগুলি উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধী ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বদলগুলির মধ্যে আছে
• স্বাস্থ্যকর খাওয়া
• অ্যালকোহল (মদ) পান বন্ধ করা
• কম লবণ ব্যবহার অথবা ক্যানড (ধাতুপাত্রে রাখা) ফুডগুলি এড়ানো কারণ এগুলিতে উচ্চ মাত্রায় সোডিয়াম থাকে।
• রোজকার রুটিনে হাঁটা এবং জগিং-এর মত সহজ ব্যায়ামগুলি অন্তর্ভুক্ত করা
• মানসিক চাপ সামলানো
জীবনধারা সামলানো
একটা সুস্থ জীবনধারা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যকর পদক্ষেপগুলি আপনার ওষুধের ডোজ বা মাত্রার হ্রাস (কম করা) এবং পরবর্তী জটিলতাগুলি এড়াতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের দিকে চালিত করতে পারে। এইধরণের পরিবর্তনগুলির অন্তর্ভুক্তঃ
• আপনার ওজন লক্ষ্য করুন
একটা আদর্শ বডি মাস ইনডেক্স 18 এবং 24.5 kg/m2-এর মধ্যে হওয়া উচিত।
• নিয়মিতভাবে ব্যায়াম করুন
সপ্তাহে অন্ততঃ 5 দিন 30 মিনিটের হাঁটা আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে।
• ড্যাশ (DASH) ডায়েট অনুসরণ করুন
একটা স্বাস্থ্যকর ডায়েটের মধ্যে থাকে শস্যদানা, শাকসবজি, ফল, এবং কম-চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত দ্রব্য। এছাড়া, স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ভাল কোরেস্টেরল যুক্ত খাবার। এই ডায়েটকে ডায়েটারি অ্যাপ্রোচেস টু স্টপ হাইপারটেনশন (ড্যাশ)
• লবণ খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করুন
• ধূমপান করা ছেড়ে দিন
• মানসিক চাপ সামলান
• আপনার ডাক্তারকে দেখান
• সাহায্য চান
একটা সুস্থ জীবন যাপন করার জন্য, পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবের সাহায্য জরুরি যেহেতু তাঁরা আপনার মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করেন।
পেপটিক আলসার কি
পেপ্টিক আলসার হল একটা ফোসকা বা ঘা যা পাকস্থলীর দেয়ালের ভিতরে বা ক্ষুদ্র অন্ত্রের প্রথম অংশে যাকে বলে ডিওডিনাম, প্রকাশ পায়।
পেপটিক আলসার এর উপসর্গ
১। পেট ব্যথা
২। পেট জালাপোড়া করা
৩। ব্যথাটা সচরাচর আপনার পাকস্থলীর উপরের অংশে ঘটে, অর্থাৎ, নাভির উপরে।
৪। ঢেঁকুর তোলা,
৫। অসুস্থতার অনুভূতি,
৬। বমি করা,
৭। কোনও আপাত কারণ না থাকা সত্ত্বেও ওজন কমা এবং ক্ষুধামান্দ্য।
৮। এছাড়াও বুকজ্বালা এবং বদহজম অনুভব করেন।
পেপটিক আলসার এর চিকিৎসা
পেপ্টিক আলসার চিকিৎসায় খুব ভাল সাড়া দেয় এবং প্রায় দু’মাস সময়ের মধ্যে নিরাময় হতে শুরু করে।ওষুধগুলোর মধ্যে আছেঃ
• প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর্স
প্রচলিতভাবে ব্যবহৃত পিপিআইগুলির মধ্যে রয়েছে ওমেপ্রাজোল, প্যান্টোপ্রাজোল এবং ল্যান্সোপ্রাজোল।
• অ্যান্টিবায়োটিকস
• এইচ2 রিসেপ্টর অ্যান্টাগোনিস্টস
• অ্যান্টাসিডস এবং অ্যালগিনেটস
সব পেপ্টিক আলসারের 90% হচ্ছে এইচ. পাইলোরি ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা ঘটিত একটা সংক্রমণের ফল। এধরণের সংক্রমণগুলি অ্যান্টিবায়োটিকগুলির একটা কোর্স নেওয়ার দ্বারা সহজেই নিরাময় হতে পারে প্রস্তাবিত সময়ের জন্য, যা সচরাচর দু’সপ্তাহ হয়।
জীবনধারা সামলানো
মশলাদার খাবার, মানসিক চাপ এবং ধূমপান ও অ্যালকোহল (মদ) গ্রহণের থেকে বিরত থাকা । সেগুলো উপসর্গগুলোকে আরও খারাপ করতে সহায়ক হয়।
মাইগ্রেন কি
মাথাব্যথা বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। তাদের সবগুলিতেই অস্বস্তি ও ব্যথা হয়। মাইগ্রেন হলে ধকধকানি মূলক ব্যথা হয়। মাইগ্রেনকে সব চেয়ে দুর্বল করা মাথাব্যথা বলে মনে করা হয়। পুরুষদের চেয়ে তিন গুণ বেশি মহিলারা এই রোগে ভোগেন। কিছু তীব্র মাইগ্রেনের আক্রমণের সাথে কখনও কখনও চাক্ষুষ সতর্কবার্তার লক্ষণ বা জ্যোতি দেখা যায়।
আপনি জানেন কি?
• কিছু ব্যক্তি,যারা প্রায়ই মাইগ্রেন রোগে ভোগেন তারা এর কারণ চিহ্নিত করতে পারেন, যেমন এলার্জি, মানসিক চাপ, আলো এবং বিশেষ কয়েকটি খাদ্য।
• অনেক রোগী অনুভব করতে পারেন যে মাইগ্রেনের আক্রমণ আসন্ন। তারা মাথাব্যথা শুরুর আগেই সতর্কতার সংকেত পেয়ে যান। যেমন বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া বা আলোর ঝলকানি।
• অনেক মাইগ্রেন রোগী সতর্কতার সংকেত পেয়েই ওষুধ গ্রহণ করে রোগের তীব্রতা থেকে রক্ষা পান।
• যাদের তীব্র আক্রমণ হয় তারা প্রতিরোধী ওষুধ গ্রহণ করে আক্রমণের সংখ্যা কম করতে পারেন।
মাইগ্রেন এর উপসর্গ
মাইগ্রেন শৈশব, কিশোর বা প্রারম্ভিক প্রাপ্তবয়স্কতা থেকেই শুরু হতে পারে। একজন ব্যক্তির নিম্ন লিখিত লক্ষণগুলির কয়েকটি বা সবকটি লক্ষণ এবং উপসর্গ থাকতে পারে: কয়েকটি সাধারণ লক্ষণ নিচে দেওয়া আছে।
সাধারণ মাইগ্রেনের লক্ষণগুলি
• মাথার এক পাশ ব্যথায় ধকধক করে।
• আলো, শব্দ এবং গন্ধ অসহ্য লাগে।
• শরীর খুবই দুর্বল লাগে।
• বমির ভাব এবং বমি হয়।
• যন্ত্রণা এবং মেজাজ পরিবর্তন হয়।
• কাজে মনোযোগ দেওয়া যায় না।
• চলাফেরা করলে অবস্থা শোচনীয় হয়।
মাইগ্রেন এর চিকিৎসা
যদি কখনও আপনার মাইগ্রেন হয়ে থাকে, তাহলে আপনি বুঝবেন ব্যথা শুরু হওয়ার আগেই তাকে আটকানো ততটাই জরুরী যতটা তার শুরু হওয়ার পর। তাই মাইগ্রেনের চিকিৎসা দুইটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়:
• আটকানো (মাথাব্যথা শুরু হওয়ার আগেই তাকে বাধা দেওয়া), এবং
• তীব্র/ব্যর্থ (শুরু হওয়া মাত্রই তাকে আটকানো)।
প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা
• জীবনধারার পরিবর্তন
• ওষুধ-পত্র সেবন
• ওষুধ ছাড়া অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি (ঔষধসংক্রান্ত বিজ্ঞান বহির্ভূত বিকল্প যেমন শারীরিক চিকিৎসা, ম্যাসেজ, আকুপাংচার বা একজন চেরোপ্রাকটর'এর সঙ্গে পরামর্শ)।
• খাদ্যে পুষ্টির পরিপূরক (ম্যাগনেসিয়াম, সি-ও-কিউ10, অথবা ভিটামিন বি 2 বা বি 12)।
তীব্র এবং ব্যর্থ করার চিকিৎসা
• বাজার চলতি ওষুধ: কিছু আছে যেগুলি মূলত ব্যথা কমানোর ওষুধ (যেমন এসপিরিন, ইবুপ্রোফেন, ন্যেপ্রক্সেন এবং এসিটামিনফেন)।
• প্রেসক্রিপশান করা ওষুধ।
• আলাদা থাকা এবং দেহের পানি বৃদ্ধি (একটি অন্ধকার, নিস্তব্ধ ঘরে থাকা, প্রচুর পানি খাওয়া এবং তারপর ঘুমানোর চেষ্টা করা)।
কখন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে:
• জীবনধারার পরিবর্তন করে এবং বাজার চলতি ওষুধ সেবন করেও পর্যাপ্ত উপশম না পান,
• যদি মাসে 10 থেকে 15 বার বাজার চলতি ওষুধ সেবন করা সত্যেও মাথাব্যথার ধরণের কোন পরিবর্তন না হয়।
অনিদ্রা (ঘুম না আসার) কি
ঘুমের যাবতীয় সুবিধা বা সময় থাকা সত্ত্বেও ঘুম না আসা বা গাঢ় ঘুমে অসুবিধা বা উভয়ই হলে তা চিকিৎসাযোগ্য অবস্থা হয়, যাকে অনিদ্রা বলা
অনিদ্রা (ঘুম না আসার) এর উপসর্গ
অনিদ্রার সবচেয়ে বিশিষ্ট উপসর্গ হল দিনের বেলায় কাজকর্ম করার অসুবিধা। নিদ্রাহীনতার সঙ্গে বহু চিহ্ন এবং উপসর্গ জড়িত আছে:
• রাত্রে ঘুমিয়ে পড়ার অসুবিধা।
• রাত্রে ঘুম ভেঙে যাওয়া।
• যখন ঘুম ভাঙার কথা তার আগে ঘুম ভেঙে যাওয়া।
• সারা রাত্রি ঘুমের পরেও সকালে ক্লান্ত বোধ করা।
• দিনের বেলায় ক্লান্তি এবং ঘুমের ভাব।
• খিটখিট করা, অবসাদ, বা দুশ্চিন্তা।
• মনোযোগ হীনতা এবং মনস্থির করতে না পারা।
• সমন্বয়ের অভাব, ত্রুটি বা দুর্ঘটনা বেশি হওয়া।
• মাথাধরার চিন্তা (মাথার চারপাশে মনে হয় একটি শক্ত ব্যান্ড পরানো আছে)।
• সামাজিকতা মানতে অসুবিধা।
• পেটের (গ্যাস্ট্রোইনটেসটিনাল)সমস্যা
• ঘুম নিয়ে চিন্তা।
অনিদ্রা (ঘুম না আসার) এর প্রতিরোধ
অনিদ্রার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার সবচেয়ে ভাল উপায় হল ঘুমের স্বাস্থ্যের (‘‘স্লিপ হাইজিন’’) দিকে চোখ রাখা। স্লিপ হাইজিন উন্নত করতে হলে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি করতে হবে:
• যতক্ষণ বিশ্রাম করা উচিত মনে হবে ততক্ষণ ঘুমোন, তারপর বিছানা থেকে উঠুন (বেশিক্ষণ ঘুমোবেন না)।
• প্রতিদিন ঘুমের একটি সময়সূচি মেনে চলুন। শয্যায় যান এবং প্রতিদিন একই সময়ে উঠে পড়ুন।
• জোর করে ঘুমিয়ে থাকবেন না।
• সন্ধ্যায় বা বিকালে ক্যাফিন দেওয়া পানীয় বা অন্য কোনও উত্তেজক পানীয় খাবেন না।
• ধূমপান করবেন না, বিশেষত সন্ধ্যায়।
• শোয়ার ঘর এমন করে রাখুন যাতে পরিবেশ নিদ্রাদায়ক হয়।
• বিছানায় বসে বা শুতে যাওয়ার 30 মিনিট আগে টেলিভিশন দেখবেন না।
• খিধে পেটে নিয়ে শুতে যাবে না, আবার এমন খাদ্য খাবেন না যাতে অ্যাসিড বা রিফ্লাক্স হয়।
• শুতে যাওয়ার আগে নিজেকে সমস্ত রকম চাপ এবং দুশ্চিন্তামুক্ত করুন।
• দৈনিক ব্যায়াম করুন, কিন্তু শুতে যাওয়ার 4-5 ঘণ্টা আগে নয়।
• চাপমুক্ত হওয়ার কৌশল: উদাহরণের মধ্যে আছে ধ্যান করা এবং পেশি শিথিল করা।
• নিদ্রা নিয়ন্ত্রণ: অনিদ্রার জন্য চিকিৎসা-বহির্ভূত অন্য একটি থেরাপি হল নিদ্রা নিয়ন্ত্রণ, যা বিছানায় শুধুমাত্র আপনার ঘুমের সময়টুকু সীমিত করে। বিছানায় কাটানো সময় কমিয়ে এবং আংশিকভাবে আপনার শরীরে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটালে ক্লান্তি বাড়ে এবং পরের রাত্রের ঘুমের জন্য আপনাকে প্রস্তুত করে।
• অনেকেই জানেন না যে তাঁরা পটাশিয়ামের ঘাটতি থেকে ভোগেন বা তাঁদের মধ্যে ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি আছে, এই দুটিই উল্লেখযোগ্য পুষ্টিকর পদার্থ আপনার শরীরকে শিথিল করে ঘুমের জন্য প্রস্তুত করে।
অনিদ্রা (ঘুম না আসার) এর চিকিৎসা অনিদ্রার চিকিৎসা মূলত নির্ভর করে সমস্যার মূল কারণের ওপর। অনিদ্রার চিকিৎসা দুটি থেরাপিতে ভাগ করা যায়।
• চিকিৎসা-বহির্ভূত বা ব্যবহারিক পদ্ধতি
• চিকিৎসা থেরাপি: অনিদ্রার চিকিৎসা পদ্ধতিতে মূল শ্রেণিতে পড়ে ঘুমের ওষুধ বা সিডেটিভ এবং হিপনোটিক্স, যেমন বেনজোডায়াজিপিন, নন-বেনজোডায়াজিপিন সিডেটিভ এবং অ্যান্টি ডিপ্রেসেন্ট ওষুধ।
বেনজোডায়াজিপিন শ্রেণির বেশ কিছু ওষুধ অনিদ্রার চিকিৎসায় সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে, এবং তাদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণগুলির মধ্যে আছে:
• মিডাজোলাম
• ক্লোনাজিপ্যাম।
• ট্রায়াজোলাম।
• এস্টাজোলাম।
• লোরাজিপ্যাম।
বেনজোডায়াজিপিন শ্রেণিভূক্ত নয় এমন সিডেটিভ বা ঘুমের ওষুধও অনিদ্রার জন্য ব্যবহৃত হয় এবং তার মধ্যে বেশিরভাগ নতুন ওষুধ আছে। তাদের মধ্যে কয়েকটি নতুন ওষুধ হল:
• জেলপ্লন
• জোলপিডেম এবং
• এজোপিক্লোন
অনিদ্রার সঙ্গে যাঁরা অবসাদেও ভুগছেন তাঁদের ওপর কিছু অ্যান্টি ডিপ্রেসেন্ট, অ্যামিট্রিপটাইলিন বা ডক্সেপিন ব্যবহার করা যেতে পারে। অনিদ্রার জন্য কিছু অ্যান্টি সাইকোটিক্স ব্যবহার করা হয়েছে যদিও সাধারণত সেগুলি নিয়মিত ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয় না।
শ্বাস নালী (ব্রংকাই) সরু হয়ে যাওয়ার কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসের অসুবিধার নাম হাঁপানি। এটি একটি দীর্ঘ স্থায়ী বংশানুক্রমিক অসুখ।
হাঁপানি রোগ (এজমা) এর উপসর্গ
ফুসফুসের বায়ু চলাচলের নালীগুলির সংকীর্ণতার কারণে প্রধানত হাঁপানির লক্ষণগুলি দেখা যায়। এইগুলি হল:
• ঊর্ধ্বশ্বাস অথবা নিঃশ্বাসের দুর্বলতা
হাঁপানির রোগীদের সাধারণত: নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা হয়, দম বন্ধ লাগে অথবা শ্বাস নিতে ছটফটানি হয়। এগুলি বিশেষ ভাবে হয় যখন হাঁপানি বাড়ে।
• বুকের ভিতর শোঁ শোঁ আওয়াজ
• কাশি
হাঁপানির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ হচ্ছে কাশি বিশেষত ব্যায়াম-জনিত এবং রাত্রিকালীন হাঁপানির ক্ষেত্রে। এটা শুষ্ক এবং অ-উৎপাদনশীল কাশি।
• দম বন্ধ হয়ে আসা
অনেক সময় হাঁপানির মাত্র একটি লক্ষ্মণ দেখা যায় যেমন দম বন্ধ হয়ে আসা অথবা বুকে ব্যথা হওয়া।
হাঁপানি রোগ (এজমা) এর চিকিৎসা
চিকিৎসার উদ্দেশ্য হল রোগের তীব্র আক্রমণ থেকে তাৎক্ষনিক মুক্তি এবং ভবিষ্যতে দীর্ঘ সময় ধরে রোগের গুরুতর আক্রমণকে প্রতিহত করা।
দ্রুত ত্রাণ (ত্রাণদায়ী ওষুধ)
এইগুলিকে উদ্ধারকারী ওষুধ বলা হয়।
এইগুলি হল শ্বাসের সাথে মুখ ভিতরে টেনে নেওয়ার ওষুধ, যা প্রয়োগ মাত্রই শ্বাস নালীকে দ্রুত শিথিল করে দেয় (ব্রঙ্কোডায়ালেশান)। ডাক্তাররা যে ওষুধগুলি প্রেসক্রাইব করেন সেগুলি হল অলবিউটেরল, লেভালবিউটেরল এবং পিরবিউটেরল।
দীর্ঘমেয়াদী নিয়ন্ত্রণ (নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধ)
• ইনহেলড কর্টিকোস্টেরয়েডস
ইনহেলড কর্টিকোস্টেরয়েডস এবং দীর্ঘ সময় কার্যকরী বিটা-অ্যাগনিস্টস
• দীর্ঘকাল-কার্যকারী এন্টিকোলিনারজিকস
• মিথাইলজ্যানথিনস
মিথাইলজ্যানথিনগুলি, যেমন থিয়োফাইলিন, রাত্রি-কালীন হাঁপানির প্রতিরোধ করতে ব্যবহার করা হয়।
• লিউকোট্রাইন রিসেপটার এন্টাগনিস্ট অথবা লিউকোট্রাইন মডিফায়ার্স
এই ওষুধগুলি খেলে শ্বাস নালীতে ব্রঙ্কোস্প্যাজম, প্রদাহ এবং ফোলা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। এদের মধ্যে আছে মন্টেলুকাস্ট এবং জাফিরলুকাস্ট।
• মাস্ট-সেল স্থিতিশীলকারক
এগুলি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে; ফলে ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে বা ব্যায়াম করার জন্য যে তীব্র হাঁপানি হয় তা নিয়ন্ত্রণ করা যায় (উদাহরণ: ক্রোমোলিন সোডিয়াম)।
• ইমিউনোথেরাপি অথবা ইমিউনোমডিউলেটারস
ওমালিজুমাব'এ রয়েছে এন্টি-আই-জিই মোনোক্লোনাল এন্টিবডিজ, যা এলার্জেনের বিরুদ্ধে দেহের এলার্জি প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। অন্য উদাহরণগুলি হচ্ছে রেসলিজুমাব এবং বেনরালীজূমাব।
• ব্রঙ্কিয়াল থার্মোপ্লাস্টি
• জীবনধারার নিয়ন্ত্রণ
হাঁপানি রোগের কোন নিরাময় নেই। নিয়মিত হাল্কা ব্যায়াম করা যেমন হাঁটা, ধূমপান পরিত্যাগ করা এবং পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাসের মতন জীবনধারার কয়েকটি পরিবর্তন হাঁপানির ব্যবস্থাপনায় যোগ করা যেতে পারে।
কোলেস্টেরল কি
যকৃতে প্রস্তুত এক ধরনের চর্বিজাতীয় মোমের মত বস্তুকে কোলেস্টরল বলা হয়। যখন রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি হয় তখন তা থেকে হার্টের রোগ, হৃদরোগে আক্রমণ, এবং স্ট্রোক হতে পারে।
কোলেস্টেরল এর চিকিৎসা
নিম্নলিখিত অবস্থায় বর্ধিত কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে ওষুধ প্রয়োগ জরুরি:
• যখন জীবনশৈলী এবং খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন করেও বর্ধিত কোলেস্টরলের মাত্রা কমান যায় না।
• হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস থাকে।
• খারাপ কোলেস্টরলের (LDL) মাত্রা বেশি থাকে।
• 40-75 বছরের ব্যক্তি যাঁদের হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি থাকে।
• যাঁদের ডায়বিটিস অথবা হার্টের রোগ থাকে।
রক্তে বর্ধিত কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। আপনার বয়স, স্বাস্থ্যের বর্তমান পরিস্থিতি, হৃদরোগ বা স্ট্রোকের সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে আপনার চিকিৎসক আপনার জন্য নির্দিষ্ট ওষুধের পরামর্শ দেবেন।
ওষুধের মধ্যে থাকে:
• স্ট্যাটিন ব্যবহার করা হয়। যকৃতে কোলেস্টরলের উৎপাদন বন্ধ করে দেয় স্ট্যাটিন।
• নিয়াসিন (ভাইটামিনB3 বা নিকোটিনিক অ্যাসিড) LDL ( খারাপ কোলেস্টরল) কমায় এবং HDL ( ভাল কোলেস্টরল) বাড়ায়।
• ফাইব্রেটস রক্ত খুব কম-ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন (VLDL) থেকে মুক্ত করে। তারা HDL মাত্রাও বাড়ায়।
• খাদ্য থেকে কোলেস্টরল শোষণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এজাটিমিব।
জীবনশৈলী ব্যবস্থাপনা (লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্ট)
উচ্চ কোলেস্টরল মাত্রা ঠিক রাখার জন্য জীবনশৈলীর পরিবর্তন একটি বিরাট ভূমিকা পালন করে। শরীরে উপযুক্ত মাত্রায় কোলেস্টরল রাখার জন্য জীবনশৈলীর কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের পদক্ষেপ নিচে দেওয়া হল:
• খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন
• শারীরিক কসরৎ
নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম উচ্চ কোলেস্টরল কমাতে এবং স্থূলত্ব নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।
• ধূমপান করবেন না
কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণ করতে একেবারেই ধূমপান করবেন না।
• ওষুধের ব্যবহার
কার্যকরভাবে কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণ করে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসতে চিকিৎসকের পরামর্শমত ওষুধ গ্রহণ অব্যাহত রাখুন।
• কোলেস্টরল কমাতে খাদ্য
যে সব খাদ্য কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে সেগুলির মধ্যে আছে ওট, বার্লি, বিনস (রাজমা, ছোলা, ডাল), বেগুন, ঢেঁড়স (ওকরা), বাদাম (কাঠবাদাম, আখরোট, চিনাবাদাম), বনষ্পতি তেল (সূর্যমূখী তেল, কুসুমবীজের তেল), ফল (লেবুজাতীয়, আপ-এল, আঙুর), স্টেরল এবং স্ট্যানল সমৃদ্ধ খাদ্য (প্লান্ট গাম যা ফল থেকে কোলেস্টরল শোষণ করে), সয়া (টোফু, সয়াদুধ), মাছ, (সামন, ম্যাকরিল), জোলাপের মধ্যে থাকা ফাইবার।
মানব দেহে লাল রক্ত কোষ'এর (আর-বি-সি) সংখ্যা বা হিমোগ্লোবিন'এর ঘনত্ব হ্রাস হলে যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তাকে অ্যানিমিয়া বলা হয়। অ্যানিমিয়া বিভিন্ন প্রকারের হয়, যেমন, লোহা কম থাকার কারণে অ্যানিমিয়া, মেগালোব্লাস্টিক অ্যানিমিয়া, এপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া, এবং আরও অনেক।
রক্তাল্পতা এর উপসর্গ
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে অ্যানিমিয়া রোগে রক্তের অক্সিজেন বহন ক্ষমতা কমে যায়। কাজেই, উপসর্গগুলিও এর সাথে সম্প্রীত:
• দুর্বলতা
• নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা
• অস্বস্তিকর অনুভূতি
• মাথা ঘোরা
• কর্মক্ষমতা হ্রাস
• মাথা ব্যথা
• পাইকা
চক, বরফ এবং মাটি প্রভৃতি যা সাধারণত খাদ্য নয় এমন বস্তু খাওয়া বা খাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করাকে পাইকা বলা হয়।
রক্তাল্পতা এর চিকিৎসা অ্যানিমিয়ার চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত কয়েকটি বিষয়:
• আপনার ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী লোহা, ভিটামিন বি 12 এবং ফলিক এসিড সম্পূরক খাদ্য গ্রহণ করে সঠিক পুষ্টি বজায় রাখতে হবে।
• যে ধরণের খাদ্যে লৌহ আছে, সেগুলি খেতে হবে, যেমন সবুজ পাতাযুক্ত সবজি, তাজা ফল, ডিম, মাংস এবং মাছ।
• ভিটামিন যুক্ত ফল যেমন লেবু, কমলালেবু, আম ইত্যাদি। ভিটামিন-সি সম্পূরক খাবার বাজারে পাওয়া যায়। তবে ডাক্তারবাবুর কাছে জেনে নিন আপনার বয়স এবং দেহের ওজন অনুসারে সঠিক মাত্রা কত হবে।
• বাচ্চাদের পেটের ক্রিমি বিনাশ করতে ছয় মাস অন্তর একবার আলবেনডাজোল ট্যাবলেট খাওয়াবেন।
• অ্যানিমিয়া থাকুক বা না থাকুক, কিশোর ছেলে এবং মেয়েদের এবং গর্ভবতী মহিলাদের লৌহ এবং ফলিক অ্যাসিড সম্পূরক খাবার দিতে হবে।
অ্যানিমিয়ার শ্রেণীর উপর নির্ভর করে চিকিৎসা:
• কম অ্যানিমিয়া থাকলে আপনার ডাক্তার আপনাকে লৌহ এবং ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করতে পরামর্শ দেবেন।
• মাঝারি মাত্রার অ্যানিমিয়া থাকলে আপনার ডাক্তারবাবু লৌহ এবং ফলিক অ্যাসিড সম্পূরক খাদ্যের পরামর্শ দেবেন। যদি লৌহ সমৃদ্ধ খাদ্য খেতে না পারেন, তাহলে ইনজেকশান দিয়ে চিকিৎসা শুরু করবেন।
• গুরুতর অ্যানিমিয়া হয়, তাহলে আপনার স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে ডাক্তার লৌহের ইনজেকশান দেওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন বা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আপনার পালস, রক্তচাপ এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের মতো জরুরী জিনিসগুলি পরীক্ষা করতে বলতে পারেন। আপনাকে বাইরে থেকে অক্সিজেনও দিতে হতে পারে।
• রক্তদান
যদি গুরুতর অ্যানিমিয়া হয় এবং সিকেল সেল অ্যানিমিয়া এবং থ্যালাসেমিয়া থাকে, তাহলে বাইরে থেকে রক্ত দিতেই হবে।
জীবনধারা নিয়ন্ত্রণ
জীবনধারার সামান্য কয়েকটি পরিবর্তন করে অ্যানিমিয়াকে কার্যকর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই গুলি হচ্ছে:
• তামাক পরিহার করুন
• খাদ্যের সাথে চা পান করবেন না
• লৌহ সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ
শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ লোহা মজুত রাখার জন্য, সবুজ শাক সবজি, তাজা ফল, মটরশুঁটি, ডিম, মাছ এবং মাংস সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করুন।